এই পর্বটা লিখতে একটু বেশী দেরি করে ফেললাম। মানুষের যখন কোনো কাজ থাকেনা তখন বোধকরি সে অকারনে বেশী busy থাকে :) আমার এখন কোনো কাজ নেই, সারাদিন ঘরেই থকি, তবু কিভাবে যে সময় চলে যায় টেরই পাইনা!
যাহোক, আজ লিখতে বসেছি ইউরোপ টুর – এর ৪র্থএবং শেষ পর্ব – ইতালী ভ্রমন নিয়ে।
অক্টোবর ০২, ২০০৯:
আমরা সুইজারল্যান্ড-এর চমৎকার টুর শেষ করে ট্রেনে করে রোম এর উদ্দেশে রওনা দিলাম। সবসময় শুনেছি ইউরোপের ট্রেন ভ্রমন হলো এক অসাধারন অভিজ্ঞতা।তাই ৯ ঘন্টার জন্য ট্রেন (Trenitalia) চড়ে সুইজারল্যান্ড থেকে রোম যেতে মোটেও পিছপা হলাম না, ডিসিশন টা আসলেই ভালো ছিল, চমৎকার অভিজ্ঞতা হয়েছে। চারদিকের মনোরম দৃশ্য ছাড়াও আর যেটা সবচেয়ে enjoy করেছি তা হলো – খাবার বগি :D একেবারে খানদানি সার্ভিস যাকে বলে, খাবারের স্বাদ অতটা ভালনা, কিন্তু খাবারে পরিবেশন আর বসার জায়গাটা যে কী সুন্দর!! আমি চা খেতে খেতে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য দেখে রোম এর দিকে যাচ্ছি – আর মনে হচ্ছিল ওই মুহুরর্তে আমার চেয়ে সুখী এই পৃথিবীতে আর কে আছে!!
রোম হলো পৃথিবীর অন্যতম প্রাচিন শহর, প্রায় আড়াই হাজার বছর ধরে এর অস্তিত – একে পাশ্চাত্য ইউরোপ সভ্যতার সবচেয়ে শক্তিশালি শহর বলা হয়ে থাকে। প্রাচিন সভ্যতার বিখ্যাত সব নিদর্শনের জন্য প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ রোম-এ বেড়াতে যায়। রোম এ নামতেই আমাদের এক ভাই আমদেরকে নিতে আসলেন তার গাড়ীতে করে, গাড়ীতে উঠেই একটা ধাক্কা খেলাম, চারপাশের ট্রাফিক জ্যাম, এবং সবার গাড়ী চালানোর কায়দা কানুন বাংলাদেশকেও হার মানাবে। এত অনিয়ম এমন একটা জায়গায় আমি মোটেই আশা করিনি। যাহোক, ক্ষুদায় পেট চো চো করছিল, ভাই আমাদের নিয়ে গেলেন বাঙ্গালি পাড়াতে, রিতিমতো পুরান ঢাকা! রেস্তোরার মালিক, খাবার এবং পরিবেশন দেখে ক্ষনিকের জন্য ভুলে গিয়েছিলাম, আসলে আমরা রোম-এ :p
পেট পুজা করে সোজা চলে গেলাম ভ্যাটিকান সিটি দেখত – পৃথিবীর সবচেয়ে ছোটো দেশ। সবসময় শুনেছি এর কথা, কতবার যে ‘general knowledge’-এর জন্য এই তথ্য মুখস্ত করতে হয়েছিল, আর আমি সেই দেশের সামনে দাড়িয়ে খুব অবাক হয়েছি, কল্পনায় যা ভেবেছি তার সাথে কোনোই মিল নেই :( একটা বিশাল বিল্ডিং রাজকীয় কায়দায় ঘেরা একটা জায়গা, এর মাঝে কোনো দেশ দেশ ভাব খুজে পেলাম না :( আহত হয়েছিলাম একটু, কিন্তু ভাল লাগল এই জিনিসটা দেখতে পেরে, at least কল্পনায় আর wrong image-টা থাকবেনা এখন ;) পৃথিবীর সবচেয়ে ছোটো দেশ পরিদর্শন শেষে গেলাম কলোসিয়াম দেখতে – অনেকটা খোলা স্টেডিয়ামের মতো , এটা রোম আর্কিটেকচারের অন্যতম বিখ্যাত এক কাজ বলা হয়ে থাকে। এটি একসময় গ্লেডিয়েটর -এর জন্যো ব্যবহৃত হত – যারা দর্শক মাতাতো wild পশুদের সাথে কিংবা শত্রুর সাথে যুদ্ধ করে!!! ওখানে কিছুক্ষন ঘুরাঘুরি করে রোম শহরটা গাড়িতে করে একটু ঘুরে দেখলাম।প্রতিটা বাড়ী প্রাচিন আর দেখতে প্রাসাদের মতো। রোম দেখার জন্য মানুষ কত দূর থেকে আসে এবং কত কিছু ঘুরে দেখে, দুর্ভাজ্ঞ জনকভাবে আমাদের সময় সল্পতার কারনে ওই এক দিনেই রোম দেখা শেষ করতে হলো :(
অক্টোবর ০৩, ২০০৯:
পরদিন গাড়িতে করে রওনা দিলাম পিসার উদ্দ্যেশে – বিশ্বের সাতটি আশর্যের একটি ‘Leaning Tower of Pisa‘ দেখতে!! এই জিনিস দেখতে যাওয়া নিয়ে আমাদের মাঝে অনেক তর্ক বিতর্ক হয়েছিল, তর্কের কারন, আমাদের গন্তব্য ছিল ভিসেনযা – ভাইটির বাসা, আর টাওয়ার দেখতে হলে আমাদের extra কয়েক ঘন্টা উলটো দিকে যেতে হবে, আমার কথা হলো একটা টাওয়ার বেকে আছে এর মাঝে এমন কী মধু আছে যে আমাদের এত সময় নষ্ট করতে হবে সেটা দেখার জন্য!! তর্ক করতে করতেই ওখানে চলে গেলাম :P যেয়ে ভালোই হয়েছে, জীবনে কখনো বিশ্বের সাতটি আশর্যের একটিও দেখিনি, এই সুযোগে একটা তাও দেখা হলো! এমন আহামরি কিছু না হলেও জিনিসটা বেশ ইন্টারেস্টিং! বানানোর পরপরেই টাওয়ার হেলে যায় প্রায় ১১৭৩ সালে, এবং এখনো সেটা ওভাবেই দাড়িয়ে আছে শক্ত সামর্থভাবে। টাওয়ার দেখা শেষে ওইদিন ভাই-এর বাসায় ফিরে rest নিলাম। পরদিন ছিল আমাদের টুর-এর সর্বশেষ আকর্ষন – ভেনিস।
অক্টোবর ০৪, ২০০৯:
‘সব ভালো তার শেষ ভালো যার’ – কথাটার খাটি প্রয়োগ হয়েছিল সেদিন। আমদের অসাধারন মনোমুগ্ধকর আর বিচিত্র এই টুর এত চমৎকার রোমান্টিক জায়গা দিয়ে শেষ হবে আগে জানা ছিলনা। (এই ফাকে বলে নেওয়া ভালো যে এই অনেক আকাঙ্খিত টুর-এর বাস্তবিক ‘কখন কি দেখব’ -প্লেনটা আমরা করিনি, আমরা শুধু টিকেট কেটেছি কবে কোথায় যাব, detail প্লেন করেছে আমাদের অতি প্রিয় এবং ভালবাসার ‘relatives & friends’রা – যারা আগে থেকেই ভেবে রেখে ছিল আমাদের কখন কোথায় কোথায় নেয়া হবে :) ) তাই ভেনিস-এ শেষ পর্যন্ত যাওয়া হবে কিনা sure ছিলাম না!
কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে শেষ টুর ছিলঃ ভেনিস !! ভেনিস কে বলা যায় পানির জগৎ। বাংলাদেশীরা দেখলেই তাদের মনে পরে যাবে দেশের বন্যার কথা। অবশ্য সেখানে এটা কোনো দুঃখজনক ব্যাপার না!
পানিতে ঘেরা অদ্ভুত এক শহর!কত ছবিতে দেখেছি রোমান্টিকভাবে নায়ক নায়িকারা নৌকা করে চমৎকার একটা যায়গায় ঘুরে বেরাচ্ছে মনের সুখে, ভেনিস -ই ছিল সেই যায়গা। চমৎকার! চমৎকার! চমৎকার! না দেখলে এই মুগ্ধতা টের পাওয়া যাবেনা। আমরা পুরো জায়গাটা নৌকা করে ঘুরলাম। প্রতিটা গলি হলো একটা ছোটো লেক। সেই গলিগুলোর আবার নামও আছে :) চারপাশে বাড়ী, মানুষজন। খুব মজা পেয়েছি ওখানকার ambulance দেখে, ওগুলা হলো একটু বড়সড় স্পীডবোট!!! আধুনিক হোটেল-ও আছে কিন্তু, সেখানে আবার অতিথিদের আনানেয়া করার জন্য স্পেশাল স্পীডবোট! শহরটার আরেকটা উল্লেখযোগ্য জিনিশ হলো – মুখোশ। ওখানকার বাৎসরিক একটা পার্টি হয় ‘কার্নিভাল‘, সেখানে ওই মুখোশগুলো পরা হয়। ভেনিস এর মুখোশগুলোর দেখতে অসাধারন, এবং এরা মুখোশের জন্য খুব বিখ্যত! এত চমৎকার ছিল মুখোশগুলো যে ইচ্ছা হচ্ছিল সব কিনে নিয়ে আসি :)
পানিঘেরা অদ্ভুদ এবং রোমান্টিক একটা জায়গার ভ্রমন দিয়ে আমাদের ইউরোপ-এর এই বহু কাঙ্খিত টুরটি শেষ হলো। আমরা যা দেখেছি, যা enjoy করেছি, যে experience অর্জন করেছি, বন্ধু-বান্ধব আর আত্বীয়স্বজনের যে আন্তরিক ভালোবাসা আর আতিথেয়তা পেয়েছি – তা নিশ্চিত ভাষা দিয়ে আমি প্রকাশ করতে পারিনি, এবং পারবোওনা!! তবু চেষ্টা করলাম সবার সাথে এই অভুতপূর্ব অভিজ্ঞতাটা share করতে। আশা করি সবার ভালো লাগবে :)
অনেক ছবি তুলেছি, তার মাঝে উল্ল্যেখযোগ্য কিছুঃ








ভাল লাগল ইউরোপ ট্যুর করেছেন জেনে। বাই দ্য ওয়ে ছবি দেখা যাচ্ছে না।